ছেড়ে – রেখেই ধরে – রাখা
- May 30, 2021
- একুশ শতক
স্তব্ধ হয়ে গেল সেই স্বর, স্তব্ধ হয়ে গেল সেই কবিতার মুহূর্ত—যে মুহূর্তের ছোঁয়ায় থেমে যেত আমাদের সমস্ত কোলাহল। চারপাশে সমাজের প্রবাহিত গরল শুষে নিয়ে যিনি বইয়ে দিতেন নির্মল অতলান্ত জলধারা, যাঁর শব্দবন্ধে নড়ে উঠত আমাদের ধ্বস্ত বিবেক, যাঁর প্রতিটি শব্দে জন্মভূমির ভিটে কেঁপে ওঠা প্রশ্ন জেগে উঠত—সেই কবির ধ্বনি আজ স্তব্ধ হল। কবি শঙ্খ ঘোষ চলে গেলেন। তার পরিণত বয়েসকে মানতে পারি, কিন্তু কোন সময়ে চলে গেলেন? কিছুদিন আগেই লিখেছিলেন :
ওদের কীভাবে এত গিলে খায় বাচাল সমাজ!
এই বিস্ময় শানিত প্রশ্ন শুনে মনে হয় না, কবি আবার এখনই এই মুহূর্তে কথা বলে উঠছেন। ওই মদ্রস্বরে, গভীর মৃদুতায়, যেখানে আছে অতিনাটকীয়তাহীন আবেগ আর মানুষের প্রতি অকৃপণ ভালোবাসা।
কবিতার জগতে শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে যাত্রা করেছেন যে-কবি সমাজ, তাদের প্রায় সকলকেই আমরা একে একে হারিয়েছি। অবশেষে তিনিই ছিলেন আমাদের পরম আশ্রয়শিবির। জিজ্ঞাসা করেছিলাম সবচেয়ে আনন্দ কীসে?― বলেছিলেন, একটি কবিতা লিখে যতটা আপ্লুত হয়ে থাকি, তেমনটা আর কিছুতে নয়। প্রায়ই বলতেন, একটি দুটি বাদ দিলে সারাজীবনে যত গদ্য লিখেছেন, সবই নানাজনের তাড়নায়। – ভাগ্যিস লিখেছেন, তারপর কবিতার মতো তাঁর গদ্যগ্রন্থের সংখ্যা এতটাই এগিয়ে চলল, যা রীতিমতো আমাদের জীবনে এক আনন্দ-সম্ভার।
কবিতাই হোক, আর গদ্যই হোক তা আমাদের পরম প্রাপ্তি হয়ে উঠল কেন, কেন তার সঙ্গ ছাড়তে পারি না? কারণটা তো তিনি নিজেই বলেছেন : ‘কী হবে তা দেখতে পাই না, কিন্তু তবু দৃষ্টি থামাবে কে?/ প্রতিটি মুহূর্ত দেখি অতি দূর ভবিষ্যৎ থেকে।”
এরা কেটে নেয় আমার বাঁ-হাতখানা গেঁথে দেয় আলপথে।